728

সিকান্দার (২০২৫): সালমান খানের অ্যাকশন-ড্রামার ব্যর্থ জয়যাত্রা

 




সিকান্দার (২০২৫): সালমান খানের অ্যাকশন-ড্রামার ব্যর্থ জয়যাত্রা

লেখক: [আপনার নাম]
তারিখ: জুলাই ২০২৫

২০২৫ সালের ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘সিকান্দার’, বলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় তারকা সালমান খান অভিনীত বহু প্রতীক্ষিত একটি অ্যাকশন ড্রামা ছবি। এই ছবিটি পরিচালনা করেছেন দক্ষ দক্ষিণী নির্মাতা এ. আর. মুরুগাদাস, যিনি পূর্বেও ‘গজিনি’ ও ‘হলিডে’-এর মত সুপারহিট ছবি উপহার দিয়েছেন। প্রযোজনায় ছিলেন সাজিদ নাদিয়াদওয়ালা – সালমানের সঙ্গে তাঁর এক দশক পরের পুনর্মিলন ‘কিক (২০১৪)’-এর পর এই প্রথম।

চলচ্চিত্রটি শুরু থেকেই আলোচনায় ছিলো, তবে মুক্তির পর সমালোচকদের নেতিবাচক মত এবং দর্শকের মিশ্র প্রতিক্রিয়া একে বক্স অফিসে ব্যর্থতার দিকে ঠেলে দেয়। তাহলে কী এমন ঘটেছিলো যে এত বড় তারকাবহুল এবং ২০০ কোটির বাজেটের ছবি দর্শকের মন জয় করতে ব্যর্থ হলো? আসুন বিশ্লেষণ করি ‘সিকান্দার’-এর গল্প, নির্মাণশৈলী, চরিত্র ও এর ব্যর্থতা।


গল্প: এক ব্যক্তিগত ক্ষত থেকে জনসেবায় রূপান্তর

‘সিকান্দার’ এর মূল চরিত্র সঞ্জয় রাজকোট, গুজরাটের রাজকোট রাজবংশের শেষ উত্তরসূরি। তিনি ‘সিকান্দার’ নামে পরিচিত – এক শক্তিশালী, ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি যিনি অতীতের একটি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডির পর নিজেকে সমাজসেবায় উৎসর্গ করেন।

ছবির শুরুতে, একটি ফ্লাইটে এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর ছেলে অর্জুন, এক প্রাক্তন পর্ন অভিনেত্রী মনিকাকে হুমকি দেয় তাঁর পুরনো ভিডিও ছড়িয়ে দেবার। তখনই সিকান্দার চরিত্রের প্রবেশ – সালমান খান স্টাইলিস্ট ফাইট সিনে অর্জুনকে শায়েস্তা করেন। এই ঘটনাই রাজনীতিবিদ রাকেশ প্রধান ও সিকান্দারের মধ্যে প্রতিহিংসার সূচনা করে।

এই ঘটনার রেশ না কাটতেই আসে আসল ধাক্কা। সিকান্দারের স্ত্রী সৈশ্রী, যিনি একজন চিত্রশিল্পী, দুর্ঘটনাক্রমে এক বিস্ফোরণে নিহত হন। মৃত্যুর আগে তিনি তাঁর অঙ্গ দান করে যান – ফুসফুস, চোখ, ও হৃদপিণ্ড। এরপর শুরু হয় সিকান্দারের অনন্য যাত্রা – সেই তিন অঙ্গগ্রহীতার খোঁজে মুম্বাই যাত্রা।


অঙ্গগ্রহীতাদের গল্প ও সিকান্দারের পুনরুদ্ধার

১. কামার – ধারাভির বস্তিতে বসবাসকারী এক শিশুর ফুসফুস প্রতিস্থাপন হয় সৈশ্রীর দান করা ফুসফুসে। তাঁর দমবন্ধ পরিবেশ, ও স্থানীয় ভূমিদস্যু বিরাট বক্সীর অত্যাচার সিকান্দারকে তাকে রক্ষা করতে বাধ্য করে।

২. ভৈদেহী – এক গৃহবধূ যিনি তাঁর শ্বশুরের রক্ষণশীল চিন্তাধারার বিরুদ্ধে লড়ছেন। সৈশ্রীর চোখ পেয়ে তিনি নতুন দৃষ্টিতে জীবনকে দেখতে শুরু করেন।

৩. নিশা – যাঁর হৃদয়ে স্থাপন করা হয় সৈশ্রীর হৃদপিণ্ড। ভালোবাসার প্রতারণায় তাঁর হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল। সিকান্দার তাঁর জীবনেও আশার আলো জাগান।

এই তিনজনের জীবনে আলো ফেরাতে গিয়ে সিকান্দার হয়ে ওঠেন নতুন একজন মানুষ, যিনি শুধু প্রতিশোধ নয়, উদ্ধারকারী হিসেবেও নিজেকে প্রমাণ করেন।


অ্যান্টাগোনিস্ট ও ক্লাইম্যাক্স: রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও সামাজিক বিপ্লব

রাকেশ প্রধান তাঁর ছেলের অপমানের প্রতিশোধ নিতে চায়। সিকান্দারের সমাজসেবার কাজকে ধ্বংস করতে সে মিথ্যা বোমা বিস্ফোরণের মামলায় ফাঁসায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত, সিকান্দার প্রমাণ করেন তিনি নির্দোষ, এবং রাকেশের কু-কর্ম প্রকাশ পায়।

শেষ দৃশ্যে যখন সিকান্দার পুলিশে আত্মসমর্পণ করেন, মুম্বাই শহর তাঁর মুক্তির দাবিতে পথে নামে। এই ঘটনাই তাঁর ‘সিকান্দার’ উপাধিকে সত্যিকারের অর্থ দেয়।


অভিনয় ও চরিত্রায়ন: বড় নাম, কম প্রভাব

এই ছবিতে ছিল তারকাদের ছড়াছড়ি:

  • সালমান খান – সিকান্দার চরিত্রে সালমান যথারীতি ক্যারিশমাটিক ছিলেন, কিন্তু চরিত্রের আবেগী গভীরতা ফুটিয়ে তুলতে ব্যর্থ হন।

  • রাশমিকা মন্দানা – সৈশ্রী হিসেবে সংক্ষিপ্ত স্ক্রিন টাইমে অসাধারণ অভিনয় করলেও চিত্রনাট্যের সীমাবদ্ধতায় তাঁর সম্ভাবনা পুরোপুরি প্রকাশ পায়নি।

  • কাজল আগরওয়াল, শর্মান যোশী, সত্যরাজ, কিশোর, প্রতীক বাব্বর – এদের ভূমিকা ছিল ছোট, অনেকটাই গৌণ।

একমাত্র যারা কিছুটা স্মরণীয় ছিলেন, তাঁরা হলেন রাকেশ প্রধান চরিত্রে সঞ্জয় কাপুর, যার নেতিবাচক চরিত্র যথেষ্ট বলিষ্ঠভাবে ফুটে উঠেছে।


সিনেমাটোগ্রাফি, সম্পাদনা ও সংগীত: মিশ্র অভিজ্ঞতা

  • সিনেমাটোগ্রাফি – দক্ষিণী সিনেমার কৃতী চিত্রগ্রাহক তির্রু একাধিক অসাধারণ ফ্রেম উপহার দিলেও পুরো সিনেমার টোন অসংলগ্ন মনে হয়।

  • সংগীতপ্রিতমের সুর, যদিও মেলোডিক, কিন্তু মনে রাখার মতো নয়। একটি মাত্র গান ("সাইরাতে তুমি") ঈদের আগে কিছুটা জনপ্রিয়তা পায়।

  • ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর – সান্তোষ নারায়ণনের কাজ ভাল হলেও ক্লাইম্যাক্সে অতিরিক্ত আবেগঘন সাউন্ডে দর্শক ক্লান্ত অনুভব করেন।


নির্মাণ ও বাজেট বনাম বক্স অফিস

প্রায় ₹২০০ কোটির বাজেট থাকা সত্ত্বেও সিনেমাটি ভারতের বক্স অফিসে মাত্র ₹১৭৭ কোটির ঘরে সীমাবদ্ধ থাকে। ঈদের মত বড় উৎসব উপলক্ষে মুক্তি পেলেও এটি বক্স অফিস বম্ব হিসেবেই বিবেচিত হয়। সমালোচকরা একে “অত্যধিক নাটকীয়, দুর্বল স্ক্রিপ্ট” বলে রায় দেন।


কি ভুল ছিল সিকান্দারে?

১. চিত্রনাট্য – গল্পে সম্ভাবনা ছিল, কিন্তু অতি নাটকীয়তা ও দুর্বল সংলাপে তা হারিয়ে যায়।

২. বলা না বলা – ছবিটি সমাজসেবা, অঙ্গদানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিতে চেয়েছে, কিন্তু সেটা দর্শকের হৃদয়ে গেঁথে দেয়নি।

৩. নায়ক-নির্ভরতা – সালমান খানের ইমেজ-ভিত্তিক উপস্থাপনা ছবির গভীরতাকে গ্রাস করেছে। আবেগকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়নি।


শেষ কথা: সিকান্দার – এক মিসড অপারচুনিটি

‘সিকান্দার’ একটি সিনেমা যা হতে পারত বছরটির অন্যতম সেরা। কিন্তু দুর্বল চিত্রনাট্য, চরিত্রের যথাযথ উপস্থাপন না হওয়া, এবং অতিরিক্ত হিরোইজম একে বাস্তবতাবর্জিত এবং ক্লান্তিকর বানিয়ে তোলে। তবুও, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে – মানবতা, ত্যাগ এবং পুনর্জন্মের গল্প।

যদি আপনি সালমান খানের ভক্ত হন, আপনি হয়তো একবার দেখবেন। কিন্তু একজন সাধারণ দর্শক হিসেবে আপনি অনুভব করবেন – এটা হতে পারত অনেক বেশি কিছু।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Ok, Go it!