ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সংঘাতের ইতিহাস দীর্ঘ ও জটিল। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো এই সংঘাতকে নতুন মাত্রা দিয়েছে, যেখানে ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটেছে। এই প্রেক্ষাপটে, হামাসের রকেট হামলা এবং ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা জরুরি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে আকস্মিক আক্রমণ চালায়, যেখানে প্রায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত হয় এবং ২৫০ জনেরও বেশি জিম্মি করা হয়। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে, যা এখনও চলমান। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই সংঘাতে প্রায় ৪৫,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকেই নারী ও শিশু।
দীর্ঘ দুই মাসের যুদ্ধবিরতির পর, ২০২৫ সালের ২০ মার্চ হামাস তেল আবিব লক্ষ্য করে তিনটি রকেট নিক্ষেপ করে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী জানায়, এই রকেটগুলোর মধ্যে একটি প্রতিহত করা হয়, বাকিগুলো খোলা স্থানে পড়ে এবং কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। হামাস জানায়, ইসরায়েলের সাম্প্রতিক বিমান হামলায় গাজায় ৫০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় তারা এই রকেট হামলা চালায়।
ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া ও মানবিক সংকট
হামাসের রকেট হামলার পর ইসরায়েল গাজায় নতুন করে বিমান হামলা শুরু করে। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের মতে, এই হামলায় অন্তত ৮৫ জন নিহত এবং ১৩৩ জন আহত হন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই সংঘাতে মোট নিহতের সংখ্যা ৪৯,০০০ ছাড়িয়েছে। গাজায় মানবিক সংকট তীব্রতর হয়েছে; খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সেবার অভাব প্রকট। জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা এই পরিস্থিতিকে গভীর উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে।
যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা ও ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল, যা ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে স্থায়ী শান্তির পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। তবে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু চুক্তির শর্ত পরিবর্তন করলে এই প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। ফলস্বরূপ, হামাস চুক্তি প্রত্যাখ্যান করে এবং সংঘাত পুনরায় শুরু হয়। এই পরিস্থিতিতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে, কাতার ও মিসরের মতো দেশগুলো শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে।
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে চলমান সংঘাত মানবিক বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে। নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানি, অবকাঠামোর ধ্বংস এবং মানবিক সংকট এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও শান্তির পথে বড় বাধা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বিত প্রচেষ্টা, কূটনৈতিক সমাধান এবং মানবিক সহায়তা এই সংকট মোকাবিলায় অপরিহার্য। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সকল পক্ষের মধ্যে আন্তরিকতা, সমঝোতা ও মানবিক মূল্যবোধের প্রতিফলন জরুরি।